বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আহসানউল্লাহ ওরফে আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১-এর জাতীয় সংসদে গাজীপুর-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আহসানউল্লাহর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। আহসানউল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন।
১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৭-১৯৮৪ সালে পর্যন্ত তিনি ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ১৯৮৪-২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব আমৃত্যু পর্যন্ত পালন করেন।
আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।
১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন-এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনো আহসানউল্লাহ সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সৈন্যদের নীরস্ত্র করতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানী বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার জন্য জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ—প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে।
১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন।
তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি ও ছোট ছেলে জাবিদ আহসান সোহেল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
২০০৪ সালের ৭ মে একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীর নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আহসানউল্লাহ মাস্টারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে।
তাঁর নাম অনুসারে ২০১৩ সালে টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে।